Thursday, December 1, 2016

পটশিল্পের ভবিষ্যত

গোলাপ হাতে নারী
কোন শিল্প বা সম্প্রদায় এর  ভবিষ্যত সম্পর্কিত ভাবনা বলতে বোঝায় ভবিষ্যতে তার অস্তিত্ব ,গতি প্রকৃতি,বিকাশ,পরিনাম ইত্যাদি সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা প্রয়োজনীয়  পরিকল্পনা ইত্যাদি।পট শিল্পের  ভবিষ্যত  সম্পর্কে  দুশ্চিন্তার  ঢেউ  প্রবল  আকারে জাগছে-যেমন ভাবে অনান্য কার্যের ক্ষেত্রে পশ্চিমী বাতাস  ঢেউ কে প্রবল করে তুলেছে  তেমনি পটশিল্পের খেত্রে  এই চিন্তা ক্রিয়ায় কার্য কারন কোথায় যেন নীহিত এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত পটশিল্প শিল্পীদের  বর্তমান দূরবস্থা ই এ চিন্তার মূল।পট শিল্প ইতি পূর্বে কোন কোন দেশী বিদেশী শিল্প  রসিক দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং এর ভবিষ্যত  তাদের চিন্তার জগতেও আলড়ন তোলেনি এমন নয়।রবীন্দ্র ভাবনায় এর  উপস্থিতি  লখ্য  করা যায় এ কথা আগেও বলা হয়েছে,তিনি এই দেশীয় শিল্প কলার মহিমামন্বিত রূপ ও শক্তি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।এদের অবনতি  ও এদের প্রতি অবজ্ঞা তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।তবে এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হয়ত তাঁর যথেষ্ট  উদ্বেগ ছিল,তবে তার তেমন কোন প্রকাশ বা প্রমাণ লক্ষ করা যায় না। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র ‘চিত্রশিল্প’ কে নিশ্চয় সূখ্য শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।সূখ্য শিল্প তাঁর মনে বেদনা সৃষ্টি করেছিল।পটশিল্পের মতন সূখ্য শিল্পে তাঁর দৃষ্টি না পরার ও কোন কারণ নেই।রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে আধুনিক কালে পট শিল্পের  ও পটুয়াদের  ক্রমাবনতির লখ্য করে কেউ কেউ এদের ভবিষ্যত সম্পর্কে যথেষ্ট উদ্বেগ ও সংশয়  প্রকাশ করেছেন।তাদের অনেকের বিবরণ প্রত্যখ্য দর্শন ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক বলে বিশ্বাসযোগ্য।
শারীতে পটের কাজ্


গুরুসদয় দত্ত তাঁর "পটুয়াসঙ্গীত" গ্রন্থে পট সম্পর্কে  বলতে গিয়ে  পটশিল্প  সম্পর্কে  তাঁর উন্নত  শিল্পদৃষ্টি  ও এর বিলুপ্তপ্রায় অবস্থার কয়েকটি কারণ ও উল্লেখ করেছেন ।"বাংলার পল্লীচিত্র শিল্পের মধ্যে  গ্রাম্য পটুয়াদের অঙ্কিত বহু চিত্র দীর্ঘ  পটগুলি সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট ও উচ্চাঙ্গের রস শিল্প।বাংলার সামাজিক ও ধর্ম সম্বন্ধীয় রীতি নীতির পরিবর্তনে এবং বর্তমান শিক্ষার ফলে ইহা এখন বিলুপ্তপ্রায়।কিন্তু বিলুপ্তপ্রায় অবস্থাতেও ইহা যে এখনও বাংলার জাতীয় জীবনের একটি শ্রেষ্ঠতম গৌরবময় সম্পদ তাহা নিঃসন্দেহে বলা যাইতে পারে"।গুরুসদয় দত্ত বাংলার লোকায়ত পল্লীসমাজের অনুশীলিত চিত্র শিল্পের মধ্যে পটচিত্র কে সর্বোচ্চ স্থানের মর্যাদা দিয়েছেন,কিন্তু তা বিলুপ্তপ্রায় দীনাবস্থা থেকে উদ্ধার করে ভবিষ্যতে অস্তিত্বের কঠিন গ্রানাইট  প্রস্তরের ওপরে প্রতিষ্ঠিত করার তেমন কোনো কার্যকারী উপায়ের প্রস্তাব করেছেন বলে জানা নেই।তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় তাকে বাঁচিয়ে রাখার আন্তরিক  উদ্দেশ্য ছিল তাঁর।
পটেব​র্ণিত রবীন্দ্রনাথের তোতাকাহিনী

পট শিল্প কে  দুর্গতির অন্ধকার থেকে আলোয় আনতে  প্রয়োজন সরকারি আর্থিক সাহায্য   সহানুভূতি   ও সংস্কৃতি  মনোভাব।এরসাথে  বেসরকারী সাহায্য ও সহানুভূতি ও কাম্য।সর্বাগ্রে সরকারি সুপরিকল্পনা ও সুষ্ঠু প্রয়োগ  প্রয়োজন।এই শিল্পের প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি করতে রেডিও ,টিভি,প্রচার বিভাগ ডি.এ.ভি.পি প্রভৃতি গনমাধ্যম কে সক্রিয় হতে হবে।এই শিল্প এবং শিল্পীদের আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে।সর্বপরি উন্নত ব্যবস্থা এই শিল্পকে বাঁচাতে পারে।পট শিল্পকে বর্তমান দুরাবস্থা থেকে উদ্ধার করতে শুধু পরিকল্পনা নয়, নিবিড় আন্তরিকতা প্রয়োজন।
 
সাওঁতালি পটের মাদল বাদক