Thursday, December 1, 2016

পটশিল্পের ভবিষ্যত

গোলাপ হাতে নারী
কোন শিল্প বা সম্প্রদায় এর  ভবিষ্যত সম্পর্কিত ভাবনা বলতে বোঝায় ভবিষ্যতে তার অস্তিত্ব ,গতি প্রকৃতি,বিকাশ,পরিনাম ইত্যাদি সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা প্রয়োজনীয়  পরিকল্পনা ইত্যাদি।পট শিল্পের  ভবিষ্যত  সম্পর্কে  দুশ্চিন্তার  ঢেউ  প্রবল  আকারে জাগছে-যেমন ভাবে অনান্য কার্যের ক্ষেত্রে পশ্চিমী বাতাস  ঢেউ কে প্রবল করে তুলেছে  তেমনি পটশিল্পের খেত্রে  এই চিন্তা ক্রিয়ায় কার্য কারন কোথায় যেন নীহিত এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত পটশিল্প শিল্পীদের  বর্তমান দূরবস্থা ই এ চিন্তার মূল।পট শিল্প ইতি পূর্বে কোন কোন দেশী বিদেশী শিল্প  রসিক দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং এর ভবিষ্যত  তাদের চিন্তার জগতেও আলড়ন তোলেনি এমন নয়।রবীন্দ্র ভাবনায় এর  উপস্থিতি  লখ্য  করা যায় এ কথা আগেও বলা হয়েছে,তিনি এই দেশীয় শিল্প কলার মহিমামন্বিত রূপ ও শক্তি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।এদের অবনতি  ও এদের প্রতি অবজ্ঞা তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।তবে এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হয়ত তাঁর যথেষ্ট  উদ্বেগ ছিল,তবে তার তেমন কোন প্রকাশ বা প্রমাণ লক্ষ করা যায় না। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র ‘চিত্রশিল্প’ কে নিশ্চয় সূখ্য শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।সূখ্য শিল্প তাঁর মনে বেদনা সৃষ্টি করেছিল।পটশিল্পের মতন সূখ্য শিল্পে তাঁর দৃষ্টি না পরার ও কোন কারণ নেই।রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে আধুনিক কালে পট শিল্পের  ও পটুয়াদের  ক্রমাবনতির লখ্য করে কেউ কেউ এদের ভবিষ্যত সম্পর্কে যথেষ্ট উদ্বেগ ও সংশয়  প্রকাশ করেছেন।তাদের অনেকের বিবরণ প্রত্যখ্য দর্শন ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক বলে বিশ্বাসযোগ্য।
শারীতে পটের কাজ্


গুরুসদয় দত্ত তাঁর "পটুয়াসঙ্গীত" গ্রন্থে পট সম্পর্কে  বলতে গিয়ে  পটশিল্প  সম্পর্কে  তাঁর উন্নত  শিল্পদৃষ্টি  ও এর বিলুপ্তপ্রায় অবস্থার কয়েকটি কারণ ও উল্লেখ করেছেন ।"বাংলার পল্লীচিত্র শিল্পের মধ্যে  গ্রাম্য পটুয়াদের অঙ্কিত বহু চিত্র দীর্ঘ  পটগুলি সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট ও উচ্চাঙ্গের রস শিল্প।বাংলার সামাজিক ও ধর্ম সম্বন্ধীয় রীতি নীতির পরিবর্তনে এবং বর্তমান শিক্ষার ফলে ইহা এখন বিলুপ্তপ্রায়।কিন্তু বিলুপ্তপ্রায় অবস্থাতেও ইহা যে এখনও বাংলার জাতীয় জীবনের একটি শ্রেষ্ঠতম গৌরবময় সম্পদ তাহা নিঃসন্দেহে বলা যাইতে পারে"।গুরুসদয় দত্ত বাংলার লোকায়ত পল্লীসমাজের অনুশীলিত চিত্র শিল্পের মধ্যে পটচিত্র কে সর্বোচ্চ স্থানের মর্যাদা দিয়েছেন,কিন্তু তা বিলুপ্তপ্রায় দীনাবস্থা থেকে উদ্ধার করে ভবিষ্যতে অস্তিত্বের কঠিন গ্রানাইট  প্রস্তরের ওপরে প্রতিষ্ঠিত করার তেমন কোনো কার্যকারী উপায়ের প্রস্তাব করেছেন বলে জানা নেই।তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় তাকে বাঁচিয়ে রাখার আন্তরিক  উদ্দেশ্য ছিল তাঁর।
পটেব​র্ণিত রবীন্দ্রনাথের তোতাকাহিনী

পট শিল্প কে  দুর্গতির অন্ধকার থেকে আলোয় আনতে  প্রয়োজন সরকারি আর্থিক সাহায্য   সহানুভূতি   ও সংস্কৃতি  মনোভাব।এরসাথে  বেসরকারী সাহায্য ও সহানুভূতি ও কাম্য।সর্বাগ্রে সরকারি সুপরিকল্পনা ও সুষ্ঠু প্রয়োগ  প্রয়োজন।এই শিল্পের প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি করতে রেডিও ,টিভি,প্রচার বিভাগ ডি.এ.ভি.পি প্রভৃতি গনমাধ্যম কে সক্রিয় হতে হবে।এই শিল্প এবং শিল্পীদের আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে।সর্বপরি উন্নত ব্যবস্থা এই শিল্পকে বাঁচাতে পারে।পট শিল্পকে বর্তমান দুরাবস্থা থেকে উদ্ধার করতে শুধু পরিকল্পনা নয়, নিবিড় আন্তরিকতা প্রয়োজন।
 
সাওঁতালি পটের মাদল বাদক

Wednesday, November 30, 2016

যামিনী রায়ের ছবিতে পটচিত্র্

ঘোড়া ও সওয়ারী
পট শিল্পের প্রভাব আধুনিক চিত্র শিল্পীদের উপর পড়েছে একথা বলা যায়।ফরাসী চিত্র শিল্পী পাবলো পিকাসোর ছবিতে পটের প্রভাব লক্ষ করা যায়।একইভাবে যামিনী রায়ের তুলিতেও পটুয়ার টান লক্ষনীয়। ১৮৮৮  খ্রীস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের বাকুঁড়া জেলায়  চাষী প্রধান পল্লী গ্রামে  কৃষির উপর  নির্ভরশীল  এক মধ্যবিত্ত পরিবারের  জন্ম যামিনী রায়ের । ছবি আঁকা শেখেন কলকাতার সরকারী  আর্ট স্কুলে। অবনীন্দ্রনাথকে  কেন্দ্র করে যে ‘ভারত শিল্প আন্দোলন’ গ​ড়ে উঠে ছিল যামিনী রায় তাতে আকৃষ্ট না হয়ে পাশ্চাত্য  ধরনেই তেলরঙা ও জলরঙা  ছবি আঁকতেন।ইউরোপীয়  চিত্র শিল্পশৈলীতে  আঁকতে   আঁকতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন্ । পাশ্চাত্য রীতির  গতানুগতিকতায় তিনি হাঁফিয়ে  ওঠেন।এই সময়ে  যামিনী রায়ের  মানস চোখে  বেলিয়াতোলের  পটচিত্রের  কথা ভেসে ওঠে॥বেলিয়াতোরের্ পটুয়াদের ঘরে তিনি পৌছে যান।এর পরেও তিনি যান মেদনীপুরের ঝাড়গ্রাম  কোলকাতার কালীঘাট প্রভৃতি জায়গায়।এইসব জায়গা থেকে  তিনি সংগ্রহ করেন প্রচুর পট এবার তার শিল্পজীবন অন্য দিকে মোড় নেয় ।শুরু করেন পট চিত্রের উপর কাজ। সারাজীবন ধরে পটুয়াদের  পটচিত্র অনুসরন অনুশীলন করলেও অনুকরন করেননি  কোনদিন।এখানেই কৃতিত্ব ও স্বতন্ত্র যামিনী রায়ের ।এক নতুন আঙ্গিকের প্রয়োগে  পটচিত্র তিনি সৃষ্টি  করেছিলেন সহজিয়া তথা লোকায়ত ধর্মী শিল্পী চেতনা।এই চেতনার দ্যুতিতে তিনি  হতে পেরেছিলেন এদেশের এক অন্যতম সেরা  চিত্রশিল্পী।
গনেশ ও জননী দূর্গা

যামিনী রায়  চিত্রলকলা আদিতম ও শুদ্ধতর রূপের দিকে ঝুঁকেছেন  ক্রমশ।পটুয়াদের ছবি থেকে শিক্ষা নিয়েছেন।চিত্রের গড়ন ক্রমে তার কাছে পরিতক্ত্য হয়েছে । তার শৈলীর চরিত্র  হয়ে উঠল দ্বিমাত্রিকতায় পরিপূর্নতা দান। পট চিত্রের মত বিস্তৃত  চক্ষু বিশিষ্ট  চিত্র অঙ্কন করে তিনি যেন  সমস্ত দেহ কে বাদ দিয়ে শুধু চক্ষুর উপরেই মনোনিবেশ করেছিলেন। বিষয়বস্তুতে ক্র্মে পরিবর্তন এলো ।গ্রাম্য জীবন আর গ্রামের মানুষের প্রিয় ধর্ম কাহিনী ছারাও সাঁওতালদের নাচ গান্,মাদ্ল বাদন, সাঁওতালি রমনীর প্রসাধন ,সাঁওতালি মা ও শিশু সব ই যামিনী রায় এর  তুলিতে স্থান পেল।এর বাইরেও রামায়নের কাহিনী,চৈতন্যের জীব্নী,যীশুর জীবন কথা,কৃষ্ণ রাধা বলরাম দের লীলা, লাঙল হাতে চাষী ,কীর্তন গায়ক ব্যবহৃত ও পূজারত গ্রাম্য মেয়ে প্রভৃতি  বিষয়ে ছবি এঁকেছেন।দেশজ উপাদান দিয়ে তৈরি রঙে.মোটা বলিষ্ঠ রেখায় বিচিত্র সব ছবি তিনি এঁকেছেন্।পটশিল্পর পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছেন তিনি।প্রকৃতপক্ষে ওড়িষ্যার্,প্রাচীন গুজরাট্,কালীঘাটের এবং বাঁকুড়ির পটচিত্রর সাথে যামিনী রায়ের চিত্রের আত্মিক মিল রযেছে তাই শিল্প বিশ্লেষক ডঃ অশোক ভট্টাচার্য্য মূল্যবান মন্তব্য করেছেন  তিনি একজন জাত পটুয়ার মতো  গুনগত উৎকর্ষর সঙ্গে সঙ্গে ছবির সংখ্যাগত আধিক্যের দিকেও নজর দিয়েছেন।

Tuesday, November 29, 2016

বাংলার বাইরে পট

ওড়িষ্যার পটে অঙ্কিত বুদ্ধ

পূর্বে মনে করা হত  পট চিত্র  শুধুমাত্র বাংলার  নিজস্ব চিত্রসম্পদ। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে  পট চিত্র সর্ব ভারতীয় লোকশিল্প।বাংলার গ্রাম জনপদে শহরে যেমন  এর  অনুশীলন এবং  আদর ল​ক্ষ  করা যায়। তেমনি  বাংলার সংলগ্ন উড়িষ্যা ,আসাম্,বিহার  প্রভৃতি রাজ্যে সূদুর  গুজরাট  ,উত্তরপ্রদেশ অন্ধ্রপ্রদেশ্,রাজস্থান প্রভৃতি অন্য রাজ্যেও এর প্রচলন  ল​ক্ষ করা যায়। পট পাওয়া গেছে  রাজস্থানের  যোধপুর,জয়পুর,উদয়পুর থেকে মহারাষ্ট্রর পৈথান, ওয়ারঙ্গল নলগোন্ডা  থেকে , দক্ষিণের তাঞ্জোর    উড়িষ্যার বিভিন্ন জেলা থেকে।এমনকি কয়েকটি  স্থানের পট  অতুলনীয় ঔজ্বল্যে ভরা। যেমন  নাথ দ্বারের পারজী কা-প-ড় ,গুজরাট-রাজস্থানের জৈন পট গুলি।অনুসন্ধানের ফলে  বহু  আঞ্চলিক পট-নিদর্শন  হাতে  এসছে  সেগুলি কাপড়ে আঁকা । যথেষ্ট গুরুত্ত্ব দেওয়া হত বলেই  স্থায়ীকরণের উদ্দেশ্যে  এবং জনসমখ্যে  প্রদর্শিত  হ্ত বলে  কাপড়ে আঁকা হত  সেগুলো। প্রাচীন  ভারতের হিন্দু,জৈন,বৌদ্ধ গন ধর্মপ্রচার নীতিশিক্ষা ও চিত্ত বিনোদনের  জন্য ব্যপক পট চিত্র ব্যবহার করতেন। অবশ্য  নাম ও রচনা শৈলীতে মিল ও অমিল   দুই ল​ক্ষনীয় এবং আশ্চর্য্যের ব্যাপার  সব রাজ্যের পটুয়ারা বিশ্বাস করেন যে তারা দেব শিল্পী বিশ্বকর্মার সন্তান।বাংলার পটুয়ারা যেমন এই  মিথে বিশ্বাসী ,তেমনী  সূদুর অন্ধ্র  প্রভৃতি রাজ্যের পটুয়ারাও  এতে বিশ্বাসী।বাংলার সংলগ্ন উড়িষ্যার পটুয়ারাও এই মিথে অবিশ্বাসী হবেন  এমন কোন সম্ভাবনা নেই।
অন্ধ্রপ্রদেশের পটচিত্র​

উড়িষ্যা বাংলা সংলগ্ন রাজ্য বলেই  সর্বাগ্রে সেখানে পটের প্রচলন  সম্পর্কে  তথ্যাদি  অনুসন্ধান  বিশেষ জরুরী। উড়িষ্যা বাংলা সংলগ্ন  রাজ্য  হওয়ায় এখানে পটচিত্র শিল্পের দ্বারা  ব্যাপক পটচিত্রের চর্চা ও মিল অপ্রাত্যাশিত বা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কারণ বাংলা    উড়িষ্যার মানুষের  নৃতাত্ত্বিক মিল বা সমগোত্রিয়তা লক্ষ  করা যায়। মন্দিরময়  উড়িষ্যার মন্দিরে মন্দিরে  বিশেষত  জগন্নাথ মন্দিরে  পটচিত্র বিক্র​য় এর প্রথা অনুসৃত  হওয়া  স্বাভাবিক।উড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বরে অবস্থিত “ভুবনেশ্বর​ মিউজিয়ামে” এ প্রাচীন  চিত্রাবলীর মধ্যে রক্ষিত আছে মোটা কাপড় এর উপর অঙ্কিত দুটি জড়ানো পটচিত্র। রামায়নের কাহিনী উপজীব্য বলে সেগুলিকে রামায়্নী পট বলতে কোথাও বাধা নেই আর  ব্স্ত্র খন্ড  অর্থাৎ পট্ট এর উপর অঙ্কিত বলে নিঃসন্দেহে  বলা যায় যে সে সময়ে পট আঁকা হত বস্ত্রখন্ডের উপর  সে সময় কোন এক পট শিল্পী লীলায়িত তুলির স্পর্শে এগুলি করেছেন।অর্থাৎ এগুলি সুপ্রাচীন সৃষ্টি,পট শিল্পী স্বয়ং কিংবা অন্য  কোন ব্যক্তি ওই দু খানি জরানো পটের নিচেই পটের বিষয়বস্তু লিখে দিয়েছেন  ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষায়। ফলে পট চিত্রদ্বয় সম্পূর্ণ্য দূর্বোধ্য ঠেকে না।
ওড়িষ্যার পট

গনমাধ্যম হিসেবে পটের ভুমিকা

ভারতবর্ষের শতকরা আশি ভাগ মানুষই গ্রামে থাকেন ,সেই গ্রাম গুলির য্থায্থ বিশ্লেষণ  না করে  আধুনিক সভ্যতার  প্রয়োগ করার জন্য তা  ব্যর্থ হচ্ছে জনসোংযোগের জন্য  আধুনিক সভ্যতায় সংবাদপত্র ,দুরদর্শন্,বেতার  ব্যব্হৃত হছেঅথচ নিরক্ষরতায় ভরা এই দেশে একমুখীন মাধ্যম গুলো জনমনে খুব বেশি প্রভাব  ফেলতে  পারছে নাসংযোগ সাধিত হয  তিনটে মুল বিষয়ে অবলম্বন করেই - মেসেজ বা বক্তব্যগ্রহনকারী বা রিসিভার , ফিড ব্যাক  বা প্রত্যাগত সাড়া পেলেই  সংযোগ এর সাফল্য নির্ণীত হয় যোগাযোগ এবং মাধ্যম দুটি শব্দ একে  অপরের পরিপুরক্যোগাযোগ বাবস্থা গড়ে ওঠে  মাধ্যম বাহন কে অবলম্বন করেইশূন্যের উপর ভর কর যোগাযোগ কার্যকরী হয়্না,প্রচারকারি এবং গ্রহনকারির  মধ্যের দুরত্ব কমলেই নৈকট্য স্থাপিত হয়,নৈকট্যর আর এক নাম যোগাযোগ
আধুনিক সভ্যতায় বৈদ্যুতিন মাধ্যমের অগ্রগতি হয়েছে এর পাশাপাশি আছে লোকমাধ্যমগুলি যা যুগপরম্পরাগত গ্রামের নিরক্ষর মানুষেরা শিক্ষা,ধর্ম,আনন্দ উপভোগ করত এই লোকমাধ্যম গুলির সাহায্যেলোকসঙ্গীত,লোকনাট্য্,লোকচিত্র ইত্যাদি লোকসংস্কৃতির উপাদানগুলি সংযোগ মাধ্যম হিসাবে খুবই গুরুত্ব্পূর্ণসাধারণ লোকসমাজে সংবাদ্পত্র​,টেলিভিশন,ভিডিও,বেতার প্রভৃতি মাধ্যমগুলির আবেদন কম,এগুলি সবই সমাজের ওপরের স্তরের মানুষের জন্যএই প্রসঙ্গে সাধারন মানুষগুলির জন্য বিকল্প মাধ্যম হিসেবে লোকমাধ্যমের কথা ভাবা যেতে পারে


প্রসঙ্গে  পটচিত্রর ভুমিকা উল্লেখযোগ্য কারন পটের প্রাচীন ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়  হাজার হাজার বছর ধরে এদেশের নানা জায্গায় জনগণের শিক্ষা,চিত্তবিনোদন বিভিন্ন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ড়ানো পট চৌকো পট ব্যবহৃত হততখন শিক্ষা বিস্তারের এটাই ছিল অডিও ভিসুয়াল মাস মিডিয়া
অধিকাংশ পটের শেষে লোকশিক্ষার প্রচারের জন্যই  যমপুরীর বিভীষিকাময় চিত্র উপস্থাপন করা হত,অপরাধ প্রবন মানুষের মন আঁত্কে উঠত পাপ কাজ থেকে তারা বিরত থাকত,ভয় থেকে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি জন্মাত
                    কেও ধরে চুলের  মুঠি কেউ ধরে গায়
    পাপী লোক হলে লোহার ডাঙ্গে বেড়ে সে তার মস্তক ফাটায়

ভারতবর্ষের ৬৭ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর তাই সরকারী তরফে সাক্ষরতা অভিযান করা হয়,সেখানে পট সহজ একটি মাধ্যম বলে পটুয়ারা সরকারি তরফে অংশগ্রহন করেন,পটে অঙ্কিত ছবিগুলি সরল,গানের ভাষা সহজ সুর সহজে মানুষকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম গণমাধ্যম হিসাবে পটের সার্থকতা এভাবে নিহীত আছে


তবে অডিও ভিস্যুয়াল মাধ্যম হিসাবে কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে যেমন- ()পটের আকার ছোট বলে একসঙ্গে অনেক মানষ দেখতে পারেননা () বৈচিত্রহীন পটের গানের সুর দর্শককে অমনযোগী করে তোলে
আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে মানুষের জীবন অনেক পরিবর্তীত,মানুষ আজ শহরমুখীবিনোদন বা সংযোগ মাধ্যম হিসেবে পটের ভুমিকা একেবারে শেষ একথা সর্বৈব ভাবে সত্যি যুগের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে পদ্ধতি প্রকরণের পরিবর্তন আসবে কিন্তু পট পটুয়ার অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে না তা য়ে যাবে


Monday, November 28, 2016

পটের বিভিন্ন সংগ্রহশালা

লোকজীবন চর্চা  ও মানস চর্চার সামগ্রিক রুপায়্ন লোকসংস্কৃতি।লোকসংস্কৃতির উপাদান গুলির মধ্যে  বস্তুগত ও অবস্তুগত দুই ধরনের উপাদান ই  আছে।যে কোন জাতিরই আপন আত্মার অব্স্থান  লোকসংস্কৃতির গভীরে প্রথিত​।ফলে কোনো জাতির অস্তিত্ব খুজে পেতে  লোকসংস্কৃতির উপাদানের উপরে নির্ভর করতে হয়্।সেই কারনে লোকসংস্কৃতির সঙ্গে জরিত বিষয়্বস্তু  সংরক্ষণে সংগ্রহশালা গুলির যথেষ্ট  গুরুত্ত রয়েছে।জাতির আত্মানুসন্ধান আর সংস্কৃতির মুলানুসন্ধানে স্ংগৃহীত উপাদান গুলি বিশেষ সাহায্য করে।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা সংগ্রহশালা গুলি অধিকাংশই পুরবস্তুনির্ভর্।নৃতাত্ত্বিক উপাদান লোকশিল্পের   উপাদান নির্ভর  কিছু সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠীত  হলেও তার সংখ্যা অল্প​।সর্বত্র ই অর্থনৈতিক দুরাবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে।অধিকাংশ খেত্রেই বিজ্ঞআন সম্মত সংরক্ষণের উপায় নেই।.।তাই লোকসংস্কৃতির উপাদান পট সংগ্রহ ও সংরক্ষণে সংগ্রহশালাগুলির ভুমিকা নিন্মে আলোচিত হল​।


গুরুসদয় সংগ্রহশালা-লোকসংস্কৃতির চর্চার খেত্রে  গুরুসদয় সংরগ্রহশালার গুরুত্ত অপরিসীম্।গুরুসদয় দ্ত্ত(১৮৮২-১৯৪১) প্রতিষ্ঠত "বাংলার ব্রতচারী সমিতির্"  উদ্যগে কোলকাতার কাছে থাকুর পুকুর এর পাশে জোকা গ্রামে ১০০ বিঘা জমির খানিকটা অংশে এই সংগ্রহশালা  প্রতিষ্ঠত হ​য়্।সংগ্রহশালায়  জরানো পটের  সংখ্যা প্রায় ২৫৮।রামায়্নের কাহিনী  ৫২ টি পটে ,২টি  পটে দশাবতার গল্প​,১৬টি পটে বেহুলা ও মনসার কাহিনী,৬ টি পটে  চন্ডিমঙ্গল্,৮ টি পটে শক্তিরুপিনী দুর্গার কাহিনী,৬ টি গাজির কাহিনী,৫ টি  পটে  রাজার গল্প​।১৩ টি  পটে গৌরাঙ্গ কাহিনী,১০ টি সাওঁতাল পট ও কৃষ্ণলীলাকে কেন্দ্র করে রয়েছে  ৫৮ টি পট

আনন্দ নিকেতন কীর্তিশালা -হাওড়া জেলার বাগনানে ১৯৬২ সালের ১৪ইজানুয়ারি আনন্দ নিকেতন  কীর্তিশালার  উদ্বোধন হ​য়। এখানে সংগৃহীত মোট পটের সংখ্যা ৮৬। এই পট শিল্পের দুটি বিভাগ ১)জড়ানো পট ২) চৌকো পট 

আশুতোষ  সংরগ্রহশালা -কলিকাতা বিশ্ব বিদ্যাল​য়্-১৮৫৭ সালে  কলিকাতা বিশ্ব বিদ্যাল​য় প্রতিষ্ঠত  হওয়ার পর  ১৯৩৭ সালে  আশুতোষ  সংরগ্রহশালার  উদ্বোধন  হয়।এই  সংরগ্রহশালায়  দুই ধরনের পট আছে   ১)জড়ানো পট ২) চৌক পট। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগৃহীত মোট ১৯ টি জড়ানো পট আছে। এই পট গুলি  সঙ্রখনের জ্ন্য  পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ফিউমেগেশান চেম্বার ব্য়বহার করা হয়। 

কল্যানী বিশ্ববিদ্যাল​য়  লোকসংস্কৃতি বিভাগের  সংরগ্রহশালা- বিশ্ববিদ্যাল​য় স্তরে পূর্ণাঙ্গ  লোকসংস্কৃতি বিভাগ  প্রতিষ্ঠা ক্ষেত্রে  কল্যানী বিশ্ববিদ্যাল​য়ের গুরুত্ব অপরিসীম্।১৯৯০ সালে এই  বিশ্ববিদ্যাল​য় টি  প্রতিষ্ঠিত হয়।তখন থেকেই  সংরগ্রহশালা স্থাপন এর উদ্যোগ দেখা যায়।এখামে মোট চারটে পট প্রদর্শিত আছে

রজনীকান্ত জ্ঞান মন্দির  ও গবেষণা  কেন্দ্র-এখানে   শোলার  কয়েকটি পট  সংগৄহীত রয়েছে

তাম্রলিপ্ত  সংগ্রহশালা ও  গবেষণা  কেন্দ্র-  জেলার  তমলুক পুরসভার  দুটি ঘরে  সংগ্রহশালার উপাদান প্রদর্শিত আছে এবং সংগ্রহশালায় ১৫ টি জড়ানো পট  প্রদর্শিত হয়েছে।

আচার্য্য যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবন-বিষ্ণুপুরে  অবস্থিত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের একটি শাখা।এখানে  সংগৃহীত জরানো পটের সংখ্যা ১০।

রামকৃষ্ণ মিশন সংগ্রহশালা-কোলকাতার গোলপার্কে অবস্থিত এই সংগ্রহশালায় ওড়িষার পট রয়েছে।এর ম্ধ্যে ৩টি  জগন্নাথ্ পট  ও একটি অষ্টাদশ  শতকের  তৈরী নবগ্রহ পট রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য  প্রত্নতত্ত্ব  সংগ্রহশালা- কোলকাতা  বেহালা  ট্রাম ডিপোর কাছে অব্স্থিত  এখানে মোট ১৭ টি পট প্রদর্শিত হয়েছে।কিছু কালীঘাট্ পট ও আছে। 

ভারতীয় যাদুঘর্- কোলকাতার এশিয়াটিক  সোসাইটিতে ১৮১৪ সালে উদ্বধন হ​য়।ভারতীয় যাদুঘরে মোট ৪০ টি পট আছে। 


বিড়্লা  একাডেমি অব আর্ট আ্ন্ড কাল্চারাল  সংগ্রহশালা-মূলত এটি  ভারতীয় ধ্রপদী শিল্পের প্রদর্শন কক্ষ​  ।তবু এখানে দুটি কালীঘাটের পট রয়েছে। এর মধ্যে   একটি  শিব   ও অপরটি মহিষাসুরমর্দিনী  মূর্তি।

Saturday, November 26, 2016

পটের গান


পটচিত্র প্রাচীন ভারতের অন্যতম চিত্রশিল্প​.ৎসংলগ্ন পটুয়াদের গান সুপ্রাচীনসেই সম থেকে পটের গান আজও প্রচলিত


গুরুসদয় দত্ত পটের গান কে গীতিকা বলেছেন্গীতিকা ইংরাজি "ব্যালাড" এর তুল্য,গীতিকার সঙ্গে পটের গানের মিল দেখা যায়,উভয় গানেই সুরের থেকেও কাহিনীর গুরুত্ব বেশীপটের গানে দু ধরনের চিত্র আছে-গানের নির্মিত চিত্র পটুয়ার অঙ্কিত চিত্রপটের গান মৌখিক ঐতিহ্যাশ্রিত যেখানে কাহিনীকে সুর কথা যোগে উপস্থাপিত করা হয়পটের গানে মূলত সীমিত সময়ের মধ্যে অঙ্কিত চিত্রগুলি নির্ভর করে সঙ্গীত পরিবেশিত হতে দেখা যায়পটের গান একান্তভাবে উদ্দেশ্যমূলক রচনা,নীতি মূল্যবোধের প্রচার এর মূল লক্ষ্য

পটুয়ারা একাধারে যেমন চিত্রশিল্পী,তেমনি অন্যদিকে সঙ্গীত রচয়িতা সেইসঙ্গে গায়কসুতরাং পট যেমন লৌকিক তেমনি পটের গানও লোকগীতিকাস্বরূপবহুক্ষেত্রে রামায়ণ-মহাভারত থেকে আহৃত য়ার বা ত্রিপদী ছন্দযুক্ত বিষয়গুলি নিজেদের মনোমত পরিবর্তন করে নতুনভাবে পটের গান রচনা করতেনগান অনুযায়ী পট আঁকা হয়,কিন্তু পটুয়াসমাজে গানের কোন লিখিত রূপ নেই,পটুয়ারা প্রকৃতপক্ষে পিতা-পিতামহদের কাছ থেকে শুনে গান শিখে নেন্

পটশিল্পীকে যে গাইয়ে হতে হবে এমন কথা নেইঅনেক পটুয়া চমৎকার গান করেন কিন্তু পট আঁকতে জানেন নাপটশিল্পীরা চিত্র্কর সম্প্রদায়ভুক্ত্এই গানের সুর পূর্ব প্রচলিত​,যদিও রচয়িতার নাম গানে উল্লেখ করা য়না,কন্ঠভেদে গানের সুর কিছু বদলায়বাঁকু পটুয়া যে সুরে গান করেন তাঁর শান্তনু পুরোপুরি সেই সুর অনুসরণ করেননি,কিছুটা বদলালেও মূল সুরটি সহজেই বোঝা যায়,পটের গানের কথাও হুবহু অনুসৃত য়না


গুরুসদয় দত্ত মহাশ "পটুয়াসঙ্গীত" গ্রন্থে পটের গানের সংগ্রহ প্রকাশ করেছেনগানগুলি মুখে মুখে  ফেরে বলেই মূলরূপ খুঁজে পাওয়া কঠিনবীরভূমের লোকসংগীতে আক্ষরিক ভাবে হুবহু পটের গানের পংক্তি এসেছে আবার পটের গানেও ঢুকে ড়েছে লোকসঙ্গীতের কথা সুরসম্প্রতি পটের গানে হিন্দী ছবির গানের সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছেপটুয়ারা পট দেখানোর জন্য এমন একটা জায়গা বেছে নেন যেখানে দশটা বাড়ির লোক একজায়গায় এসে গান শুনতে পারেনএখন পটের গানকে আকর্ষনীয় করে তোলবার জন্য পটুয়ারা ঢোল,ডুগডুগি,ডুবকি,করতাল ইত্যাদি ব্যাবহার করেনকেউ কেউ পটের গান গাওয়ার আগে ফিল্মের গান শোনান্বরুণ পটুয়ার মতে এই বিষয় গুল না কর্লে কেউ এখন আর পট দেখতে চায়নাপ্রকৃতপক্ষে পটের গানে এখন বিশুদ্ধ বাণীরূপ খুঁজে পাওয়া কঠিন
দু একটি গানের কয়েকটি চরণ উদ্ধৃত করা হল​-
পটুয়া  পট প্রদর্শন এর সঙ্গে পটের গান পরিবেশন করছেন

"সিন্ধুবধ পালা"                "প্রজাগণে বলে, রাজা শুন মহাশয়
                           শনিকে নিতে পারলে আপনার যাত্রা শুভ হয়
                            শনির চিন্তা মহাচিন্তা রাজা যখনি করিল
                                শনির দৃষ্টিতে রথ উড়িতে লাগিল"॥ 

মঙ্গলকাব্যের কবিরা পুষ্পিকায় যেমন আত্মপরিচয় দিতেন তেমনি পটুয়ারাও তাঁদের গানের শেষে নিজেদের নাম এবং ঠিকানাটিও ব্যক্ত করেনযেমন:
                                      "  এইখানেতে শেষ করিলাম মনসার বন্দনা
                                       শিল্পী দুখুশ্যাম চিত্রকর গ্রাম নয়াপিংলা ঠিকানা"