পটচিত্র প্রাচীন ভারতের অন্যতম চিত্রশিল্প.তৎসংলগ্ন পটুয়াদের
গান সুপ্রাচীন।সেই
সময় থেকে পটের
গান আজও প্রচলিত।
গুরুসদয়
দত্ত পটের গান কে
গীতিকা বলেছেন্।গীতিকা
ইংরাজি "ব্যালাড" এর তুল্য,গীতিকার
সঙ্গে পটের গানের মিল
দেখা যায়,উভয় গানেই
সুরের থেকেও কাহিনীর গুরুত্ব
বেশী।পটের
গানে দু ধরনের চিত্র
আছে-গানের নির্মিত চিত্র
ও পটুয়ার অঙ্কিত চিত্র।পটের
গান মৌখিক ঐতিহ্যাশ্রিত যেখানে
কাহিনীকে সুর ও কথা
যোগে উপস্থাপিত করা হয়।পটের গানে মূলত
সীমিত সময়ের মধ্যে
অঙ্কিত চিত্রগুলি নির্ভর করে সঙ্গীত
পরিবেশিত হতে দেখা যায়।পটের
গান একান্তভাবে উদ্দেশ্যমূলক রচনা,নীতি ও
মূল্যবোধের প্রচার এর মূল
লক্ষ্য।
পটুয়ারা
একাধারে যেমন চিত্রশিল্পী,তেমনি
অন্যদিকে সঙ্গীত রচয়িতা ও
সেইসঙ্গে গায়ক।সুতরাং
পট যেমন লৌকিক তেমনি
পটের গানও লোকগীতিকাস্বরূপ।বহুক্ষেত্রে রামায়ণ-মহাভারত থেকে
আহৃত পয়ার বা
ত্রিপদী ছন্দযুক্ত বিষয়গুলি নিজেদের মনোমত পরিবর্তন করে
নতুনভাবে পটের গান রচনা
করতেন।গান
অনুযায়ী পট আঁকা হয়,কিন্তু পটুয়াসমাজে এ
গানের কোন লিখিত রূপ
নেই,পটুয়ারা প্রকৃতপক্ষে পিতা-পিতামহদের কাছ
থেকে শুনে গান শিখে
নেন্।
পটশিল্পীকে
যে গাইয়ে হতে হবে
এমন কথা নেই।অনেক পটুয়া চমৎকার গান করেন
কিন্তু পট আঁকতে জানেন
না।পটশিল্পীরা
চিত্র্কর সম্প্রদায়ভুক্ত্।এই
গানের সুর পূর্ব প্রচলিত,যদিও রচয়িতার নাম
গানে উল্লেখ করা হয়না,কন্ঠভেদে গানের
সুর কিছু বদলায়।বাঁকু পটুয়া যে
সুরে গান করেন তাঁর
শান্তনু পুরোপুরি সেই সুর অনুসরণ
করেননি,কিছুটা বদলালেও মূল
সুরটি সহজেই বোঝা যায়,পটের গানের কথাও
হুবহু অনুসৃত হয়না।
গুরুসদয়
দত্ত মহাশয় "পটুয়াসঙ্গীত"
গ্রন্থে পটের গানের সংগ্রহ
প্রকাশ করেছেন।গানগুলি
মুখে মুখে ফেরে
বলেই মূলরূপ খুঁজে পাওয়া
কঠিন।বীরভূমের
লোকসংগীতে আক্ষরিক ভাবে হুবহু পটের
গানের পংক্তি এসেছে আবার
পটের গানেও ঢুকে পড়েছে লোকসঙ্গীতের কথা
ও সুর।সম্প্রতি
পটের গানে হিন্দী ছবির
গানের সুর লক্ষ্য করা
যাচ্ছে।পটুয়ারা
পট দেখানোর জন্য এমন একটা
জায়গা বেছে নেন যেখানে
দশটা বাড়ির লোক একজায়গায়
এসে গান শুনতে পারেন।এখন
পটের গানকে আকর্ষনীয় করে
তোলবার জন্য পটুয়ারা ঢোল,ডুগডুগি,ডুবকি,করতাল ইত্যাদি
ব্যাবহার করেন।কেউ কেউ পটের গান গাওয়ার আগে ফিল্মের গান ও শোনান্।বরুণ পটুয়ার মতে এই বিষয় গুল না কর্লে কেউ এখন আর পট দেখতে চায়না।প্রকৃতপক্ষে পটের গানে এখন বিশুদ্ধ বাণীরূপ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
"সিন্ধুবধ পালা" "প্রজাগণে
বলে, রাজা শুন মহাশয়
শনিকে নিতে পারলে আপনার
যাত্রা শুভ হয়
শনির চিন্তা মহাচিন্তা রাজা
যখনি করিল
শনির দৃষ্টিতে
রথ উড়িতে লাগিল"॥
মঙ্গলকাব্যের
কবিরা পুষ্পিকায় যেমন আত্মপরিচয় দিতেন
তেমনি পটুয়ারাও তাঁদের গানের শেষে
নিজেদের নাম এবং ঠিকানাটিও
ব্যক্ত করেন।যেমন:
" এইখানেতে শেষ
করিলাম মনসার বন্দনা।
শিল্পী দুখুশ্যাম চিত্রকর
গ্রাম নয়াপিংলা ঠিকানা।"
No comments:
Post a Comment