চিত্রের ভাষা অনন্য ও স্বতন্ত্র।শিল্পীর শিল্পভাবনা,কলাকৌশল ও বাহ্যিক উপকরনের সমন্বয়ে একটি চিত্র মানুষের চোখের সামনে ফুটে ওঠে ও নিজস্ব বক্তব্যকে ব্যাক্ত করে।পটচিত্র গ্রামীণ লোকশিল্পকলা তাই এর উপাদানগুলি দেশজ উপায়ে তৈরী হয়।পট আগে তালপাতার পুঁথিতে তারপর যথাক্রমে কাপড়ে,তুলট কাগজে এখন বাজার চলতি কাগজে পট আঁকা হয়।কাপড়ে আঁকা পট কাঁথা-পট নামে পরিচিত।পটচিত্র অঙ্কনের অপরিহার্য উপকরণগুলিকে নিম্নলিখিত তিনভাগে ভাগ করা যায়।এগুলি হল-
জমি প্রস্তুতকরণ
তুলি নির্মাণ
বর্ণ প্রস্তুত্করণ
জমি প্রস্তুতকরণ-প্রাচীনকালে চটের ওপর গোবরের প্রলেপ দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে তার ওপর বেসকালার হিসেবে সাদা রঙ ব্যাবহার করা হত,পরবর্তীকালে হাতে তৈরী খন্ড খন্ড কাগজে ছবি এঁকে পরে সেগুলি জোড়া দিয়ে একটি অখন্ড কাগজখন্ড তৈরী করে তাকে আবার একখন্ড লম্বা কাপড়ের ওপরে আঠার সাহায্যে এঁটে নেওয়া হত,এখন যন্ত্রনির্ভর কাগজে পট আঁকা হয়।
তুলি নির্মাণ-কাঠবিড়াল বা বেজী অথবা ছাগলের লোম ৫"-৬" কাঠির প্রান্তে বেঁধে নেওয়া হয়,এভাবে নানা আকৃতির তুলি নির্মাণ করা হয়।
বর্ণ-প্রস্তুত্করণ-লাল,নীল্,সবুজ বিভিন্ন রঙ এর উৎস প্রকৃতি অর্থাৎরঙগুলি ভেষজ বা গাছ-গাছড়াজাত যেমন-লাল রঙ তিন ভাগ গুড়ো সিঁদুর ও এক্ভাগ ফুল মিশিয়ে করা হয়,নীল রঙ বাজারের মযূরকন্ঠী গূড়ো নীলের সাথে আঠা জল মিশিয়ে তৈরী করা হয় ঠিক এভাবেই হরিতালের সাথে সমপরিমাণ জল আঠা মিশিয়ে হলুদ,খড়িমাটি ও কিছুটা নীল মিশিয়ে সাদা রঙ তৈরী করা হয়,তিন ভাগ হলুদ একভাগ নীল মিশিয়ে সবুজ রঙ পাওয়া যায়।মুড়ি
ভাজার খোলার
কালি ব্যাবহার
করা হয়
কালো রঙের
ক্ষেত্রে,পুঁইশাকের
পাকা দানার
রস দিয়ে
গোলাপী রঙ
প্রস্তুত করা
হয়।
অঙ্কন-প্রণালী
পট অঙ্কনের কর্মকান্ডটি কয়েকটি পেশাগত নামে পরিচিত।পট অঙ্কনের প্রাথমিক পর্বের পেনসিল ড্রয়িংকে "টিকলামো" বলা হয়,ছবিতে রঙ প্রলেপনকে বলে "বর্ণমাখানো",অবয়বগুলির সাজসজ্জা ও অন্যান্য অলঙ্করণকে "পাদলামো"বলে,সবশেষে ছবির চারপাশে ফুল পাখি লতাপাতার বর্ডার অঙ্কনকে "পাড়-আঁকা" বলে।পটুয়া প্রথমে মাপ-জোঁক করে নেন তারপর লাল রঙের পেনসিলের সাহায্যে বিষয়রস্তু আঁকা শুরু করেন,মূর্তির আদল তৈরী হয়ে গেলে সেই রঙের সাহায্যেই মূর্তির হাত, পা ,চোখ ,মুখ এঁকে নেন,কালো রঙের সাহায্যে মূর্তির চোখ,চুল আঁকা হয় শেষে সাদা রঙের ফোঁটা দেওয়া হয়।জড়ানো পটে অনেকগুলি ছবি কাছাকাছি থাকে,এক্ষেত্রে প্রতিটি ছবি পৃথক খোপে থাকে।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রঙের সাথে পরিমাণমত আঠাও মেশানো থাকেবেল
তেঁতুলের বীজ থেকে আঠা প্রস্তুত করা হয়।পটচিত্র সহজ্,সরল,বাহুল্যবর্জিত।সনাতনী ধারায়
পটুয়ারা ছবি আঁকেন,তাই অনাড়ম্বর রঙ রেখায় এই শিল্পরীতি উন্নত ও মার্জিত।
পটচিত্র প্রদর্শনরত শিল্পী |
No comments:
Post a Comment