বিভিন্ন পট ও তার শ্রেনীবিন্যাস্

পটচিত্র নানাপ্রকারের।লোকশিল্পকলার এই বিশেষ শাখাটি খুবই সমৃদ্ধ।গবেষক ও আলোচকগণ বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে পটের শ্রেনীবিভাগ করেছেন।কখনও পটের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে,অাবার কখনও পটুয়াদের চিন্তাধারা ও পটের বিষয় অনুযায়ী পটগুলিকে নানান ভাগে ভাগ করা হয়,এমনকি পটেরগানগুলিও নানাভাগে বিভক্ত।লোকসংস্কৃতিবিদদের মতানুযায়ী পটচিত্রকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগে করা যেতে পারে।

·        আকার  অনুযায়ী

·        বিষয়বস্তু অনুযায়ী

আকার অনুযায়ী আবার্ বিভাজনটি দুটি ধারায় বিভক্ত যেমন- (১)জড়ানো পট ও (২)চৌকো পট।জড়ানো পটকে দুটি শ্রেনীতে ভাগ করা যায়,যেমন-(১)আড়ে-লাটাই ও (২)লাটাই।আড়াআড়িভাবে লম্বা যুক্ত পট আড়ে-লাটাই,এতে ৭ থেকে ৮ টি খোপ থাকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ যথাক্রমে ৪০০সেমি ও ১৫-২০সেমি।অপরদিকে লম্বালম্বিভাবে বিস্তৃত পট লাটাইপট ,যাতে সর্বাধিক ২৫টি পর্যন্ত খোপ থাকে,এর দৈর্ঘ্য ১৫০সেমি ও প্রস্থ ২৮-৩৫সেমি।এই পটগুলিকে লাটাই এর মত গুটিয়ে রাখা হয় বলেই একে লাটাইপট বলে।আকার অনুযায়ী পটের দ্বিতীয় ভাগ চৌকো পট,এতে একটি চিত্র থাকে,এটি আবার তিন প্রকারের যেমন বৃত্তাকার,আয়তাকার ও চৌকো,কালীঘাট-পট  চৌকোপটেরই দৃষ্টান্ত।বিষয়রস্তু অনুযায়ী পটকে (অ) ধর্মীয় ও (আ) ধর্মনিরপেক্ষ এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।(অ)ধর্মীয়পটের দুটি শ্রেনী (১) পৌরাণিক পট (২) লৌকিকপট।পৌরাণিক পটের বিভিন্ন ভাগগুলি হল যথাক্রমে -হিন্দু,বুদ্ধ বিষয়ক,মুসলমানী,খ্রীস্টীয় ও জৈন পট।লৌকিকপটের অন্তর্গত পটগুলি হল লৌকিক উপাখ্যানমূলক ও লৌকিক দেবদেবীর পট।(আ)ধর্মনিরপেক্ষ পটের বিষয়রস্তুহল সমসাময়িক ঘটনা ও স্থানীয় মানুষের উৎসাহ ও আগ্রহমূলক যেমন-বৃক্ষরোপণ,পণ-প্রথার বিরোধিতা ইত্যাদি

সাঁওতাল সমাজে প্র্চলিত আছে স্বতন্ত্রগোছের দু-এক ধরনের পট যেমন-যাদুপট ও  চক্ষুদান পট  মালদা,পুরুলিয়া,মালবাজার্,ব​ড়বাজার প্র্ভৃতি সাঁওতাল অধ্যূষিত এই অঞ্চলগুলিতে এজাতীয় পট-শিল্পীরা থাকেন্।আর একধরনের পট-শোলারপট,যার প্রচলন সম্ভবত মোঘল-আমল থেকে এখন আর তা চোখে পরে না ৩০-৩৫ বছর আগেও দেখা কাঁথি মহকুমায় দেখা যেত।

পটচিত্রকে বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্ন শ্রেনীভুক্ত করা হয়েছে তেমনই জেলাওয়ারী সমীক্ষা করে দেখা গেছে মুর্শিদাবাদের অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ বা ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে যে নিপূণ চিত্রনের প্রমাণ ছিল তা আজ নেই,এখানকার গণকর গ্রামের বিখ্যাত রামায়ণ ও কৃষ্ণলীলা পটে সুলতানী মিনিয়েচারের ও পুঁথিচিত্রণের নিঁখুত চরিত্রের সুষ্পষ্ট ছাপ ছিল কিন্তু এখন এধরনের কাজ আর দেখা যায়না।পটুয়াদের একসময় প্রিয় বাসভূমি ছিল বীরভূম।জড়ানো ও চৌকৌ পটে তাঁরা রামায়ণ,গৌরাঙ্গলীলা,পঞ্চকল্যাণী থেকে শুরু করে ভাইফোঁটা,বিয়ে ইত্যাদি বিষয়বৈচিত্র্য নিয়ে পটচিত্র করেছেন্-এগুলি যেন জীবনের চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছিল।এখানকার যমপট খুব বিখ্যাত।বর্ধমানকে বিশিষ্ট করেছে পূর্বস্থলীর মেরতলার সূত্রধরদের আঁকা সাদাকালো পটগুলি,এই  সূত্রধর গোষ্ঠীর চিত্রীরা পটগুলিতে আলোছায়ার এক অপরূপ ব্যজ্ঞনা এনেছেন।বাঁকুড়ার পটে দুটি মূল ধারা দেখা যায়,প্রথম ধারায় আছে দাদপুর ও বিষ্ণুপুরের ফৌজদার-শিল্পীদের আঁকা পট -যেখানে নিঁখুত ও সুক্ষ-রেখা , রঙের দিকে প্রবণতা বেশী,অন্যদিকে আছে সাদামাটা লৌকিক ধরনের পট যার মধ্যে প্রায়ই রেখা ভাঙা-ভাঙা হয় ও কম্পোজিশনে মাত্রিকতা যোগের অভাব থাকে।মেদিনীপুর পটে বিষয়বৈচিত্র্যর পাশাপাশি রীতিবৈচিত্র্য বর্তমান্,রামায়ণ-মহাভারত থেকে তাৎক্ষনিক ঘটনাও স্থান পেয়েছে এখানে।সুতরাং পটের বৈচিত্র্য সুবিশাল,তা বলাই বাহুল্য।