Wednesday, November 30, 2016

যামিনী রায়ের ছবিতে পটচিত্র্

ঘোড়া ও সওয়ারী
পট শিল্পের প্রভাব আধুনিক চিত্র শিল্পীদের উপর পড়েছে একথা বলা যায়।ফরাসী চিত্র শিল্পী পাবলো পিকাসোর ছবিতে পটের প্রভাব লক্ষ করা যায়।একইভাবে যামিনী রায়ের তুলিতেও পটুয়ার টান লক্ষনীয়। ১৮৮৮  খ্রীস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের বাকুঁড়া জেলায়  চাষী প্রধান পল্লী গ্রামে  কৃষির উপর  নির্ভরশীল  এক মধ্যবিত্ত পরিবারের  জন্ম যামিনী রায়ের । ছবি আঁকা শেখেন কলকাতার সরকারী  আর্ট স্কুলে। অবনীন্দ্রনাথকে  কেন্দ্র করে যে ‘ভারত শিল্প আন্দোলন’ গ​ড়ে উঠে ছিল যামিনী রায় তাতে আকৃষ্ট না হয়ে পাশ্চাত্য  ধরনেই তেলরঙা ও জলরঙা  ছবি আঁকতেন।ইউরোপীয়  চিত্র শিল্পশৈলীতে  আঁকতে   আঁকতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন্ । পাশ্চাত্য রীতির  গতানুগতিকতায় তিনি হাঁফিয়ে  ওঠেন।এই সময়ে  যামিনী রায়ের  মানস চোখে  বেলিয়াতোলের  পটচিত্রের  কথা ভেসে ওঠে॥বেলিয়াতোরের্ পটুয়াদের ঘরে তিনি পৌছে যান।এর পরেও তিনি যান মেদনীপুরের ঝাড়গ্রাম  কোলকাতার কালীঘাট প্রভৃতি জায়গায়।এইসব জায়গা থেকে  তিনি সংগ্রহ করেন প্রচুর পট এবার তার শিল্পজীবন অন্য দিকে মোড় নেয় ।শুরু করেন পট চিত্রের উপর কাজ। সারাজীবন ধরে পটুয়াদের  পটচিত্র অনুসরন অনুশীলন করলেও অনুকরন করেননি  কোনদিন।এখানেই কৃতিত্ব ও স্বতন্ত্র যামিনী রায়ের ।এক নতুন আঙ্গিকের প্রয়োগে  পটচিত্র তিনি সৃষ্টি  করেছিলেন সহজিয়া তথা লোকায়ত ধর্মী শিল্পী চেতনা।এই চেতনার দ্যুতিতে তিনি  হতে পেরেছিলেন এদেশের এক অন্যতম সেরা  চিত্রশিল্পী।
গনেশ ও জননী দূর্গা

যামিনী রায়  চিত্রলকলা আদিতম ও শুদ্ধতর রূপের দিকে ঝুঁকেছেন  ক্রমশ।পটুয়াদের ছবি থেকে শিক্ষা নিয়েছেন।চিত্রের গড়ন ক্রমে তার কাছে পরিতক্ত্য হয়েছে । তার শৈলীর চরিত্র  হয়ে উঠল দ্বিমাত্রিকতায় পরিপূর্নতা দান। পট চিত্রের মত বিস্তৃত  চক্ষু বিশিষ্ট  চিত্র অঙ্কন করে তিনি যেন  সমস্ত দেহ কে বাদ দিয়ে শুধু চক্ষুর উপরেই মনোনিবেশ করেছিলেন। বিষয়বস্তুতে ক্র্মে পরিবর্তন এলো ।গ্রাম্য জীবন আর গ্রামের মানুষের প্রিয় ধর্ম কাহিনী ছারাও সাঁওতালদের নাচ গান্,মাদ্ল বাদন, সাঁওতালি রমনীর প্রসাধন ,সাঁওতালি মা ও শিশু সব ই যামিনী রায় এর  তুলিতে স্থান পেল।এর বাইরেও রামায়নের কাহিনী,চৈতন্যের জীব্নী,যীশুর জীবন কথা,কৃষ্ণ রাধা বলরাম দের লীলা, লাঙল হাতে চাষী ,কীর্তন গায়ক ব্যবহৃত ও পূজারত গ্রাম্য মেয়ে প্রভৃতি  বিষয়ে ছবি এঁকেছেন।দেশজ উপাদান দিয়ে তৈরি রঙে.মোটা বলিষ্ঠ রেখায় বিচিত্র সব ছবি তিনি এঁকেছেন্।পটশিল্পর পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছেন তিনি।প্রকৃতপক্ষে ওড়িষ্যার্,প্রাচীন গুজরাট্,কালীঘাটের এবং বাঁকুড়ির পটচিত্রর সাথে যামিনী রায়ের চিত্রের আত্মিক মিল রযেছে তাই শিল্প বিশ্লেষক ডঃ অশোক ভট্টাচার্য্য মূল্যবান মন্তব্য করেছেন  তিনি একজন জাত পটুয়ার মতো  গুনগত উৎকর্ষর সঙ্গে সঙ্গে ছবির সংখ্যাগত আধিক্যের দিকেও নজর দিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment