লৌকিক জীবনের ক্ষেত্রে আছে মিলনের মহাসমাগম,সম্প্রীতির অটুট বন্ধন, এক্ষেত্রে "ধ্রুপদী" রীতি মান্য করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।এই বিষয়ে না জানা,কম জানা,দীক্ষিত,অদীক্ষিত কেউই ব্রাত্য নয়।সকলেরই আসন সমান এবং সম্মানজনক।সর্বসাধারনের সংস্কৃতি সে অর্থে "লোকসংস্কৃতি"।আর এই "লোক" সর্বার্থেই সাধারণ লোক-জনমানুষ-আমজনতা" “লোকসংস্কৃতির"
একটি শাখা “লোকশিল্প”, যার একটি প্রশাখা হল "লোকচিত্রকলা"।লোকচিত্রকলার এক
বিশিষ্ট অঙ্গ "পটচিত্র", মূলত স্থানভেদে তার রূপভেদ হযেছে,এসছে অনেক বৈচিত্র।
বাংলার লোকচিত্রকলার সর্বোত্তম অভিব্যক্তি ঘটেছে পটচিত্রে।"পট"
কথাটি ব্যপক অর্থে চিত্র বোঝায়।শুধু এখন নয়,খ্রীষ্টপূ্র্ব পঞ্চম শতকে রচিত গ্রন্থাদিতেও
পট অর্থে চিত্র বোঝানো হয়েছে।প্রকৃতপক্ষে,বিশেষরূপে তৈরি বস্ত্রখন্ডের ওপর অঙ্কিত চিত্রই
হল পট।সংস্কৃত পূ্র্ববর্তী বৈদিক,পরবর্তী সংস্কৃত এবং পালি ভাষাতে "পট্ট"
কথাটির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।যার অর্থ বস্ত্র।খ্রীষ্টপূ্র্ব চতূর্থ শতকে বৈয়াকরণিক পানিনি
সৃষ্ট সংস্কৃত ও পালি ভাষায় "পট্ট"
কথাটা খুঁজে পাওয়া যায়।সেখানেও এর অর্থ বস্ত্রখন্ড।"পটে আঁকা ছবি" কথাংশটি
হয়ত রবীন্দ্রনাথ এই অর্থ ধরেই লিখেছিলেন।তিনি বস্ত্র হিসেবে চিত্রাঙ্কনে ব্যবহৃত বস্ত্রের
কথাই বুঝিয়েছেন।রবীন্দ্রনাথের অর্থবোধ ও তার স্বীকৃত অর্থকে শিরোধার্য করে পটচিত্র
কথাটির ব্যবহার,সঙ্গত হিসাবে মনে করা হয়।
পটচিত্রের প্রতি দৃষ্টি দিলে এক প্রানবন্ত ভাবের ছবি ফুটে ওঠে যা জটিলতাহীন, নয়নাভিরাম মন কে প্রসন্ন করে তোলে, এই সুপরিমিত সুশৃঙ্খল অলঙ্কারে শোভিত ছবি ভারতের সম্পদ।পটচিত্র
সমসাময়িক গ্রামীণ সমাজমনের চিত্রিত সংস্করণ ও সংবেদী দলিল।এটি গ্রামীণ সমাজের কাছে একটি পছন্দের ঘরোয়া গণমাধ্যম, যার চরিত্রের মূলে আছে বিনোদন ও বিশ্লেষনী ভাষা পরিবেশন করার ক্ষমতা। ধর্মীয় বিভেদ ও শ্রেনীগত অসাম্যর বিরুদ্ধে শাণিত হওয়ার মত প্রতিবাদী ভূমিকা পটচিত্রের ছিল।
পট প্রর্দশনের সময় গান সহযোগে ঘটনার বিবরণ উপস্থাপিত করা হয় বলে তাকে পটপ্রর্দশনী না বলে পটগান করা হিসেবেই বলাহয়।পট নামক লোকায়ত শিল্পের শিল্পীরা "পটুয়া" নামে পরিচিত।পটুয়ারা যখন পট দেখায় তখন গানও গায়।আবার বাড়িতে পট এঁকে তাকে সংরক্ষণযোগ্য করে তোলেন।গবেষকরা মনে করেন আদিবাসীরাই
পটুয়াদের
পূর্বপুরুষ।প্রাচীনযুগ থেকেই পটুয়াদের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া গেলেও মধ্যযুগেই পট ও পটুয়াদের প্রসার ঘটে।পটুয়ারা শুধু শিল্পী নয়,কবি এবং গায়কও,এদের পেশা যদিও দেব-দেবীর মাহাত্ম্য নিযে পটচিত্রাঙ্কন ও সঙ্গীতসহ তার প্রদর্শন.গান সহ "হাপু" খেলা প্রদর্শন ইত্যাদি কিন্তু ধর্মবিচারে এঁরা না হিন্দু না মুসলমান।
No comments:
Post a Comment